দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) উদ্যােগে "হিউম্যান রাইটস হিস্ট্রি" শীর্ষক এক সেমিনার বুধবার (৫ নভেম্বর ২০২৫) দুপুর ২টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও মাননীয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। সেমিনার বক্তা ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক এর পলিটিক্স এন্ড দ্যা সেন্টার ফর এপ্লাইড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের লেকচারার (হিউম্যান রাইটস) ড. রুথ ক্যালি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সেমিনার বক্তা ড. রুথ ক্যালিকে চবি ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান। উপাচার্য বলেন, ক্যাম্পাসে এখন সর্বোচ্চ একাডেমিক পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় প্রতিদিন গবেষণা, উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রতি বেশকিছু দেশ থেকে গবেষকরা আমাদের ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। তাদের সাথে গবেষণা, উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি দারুণ দারুণ সেমিনার, ওয়ার্কশপের আয়োজন করছেন। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারছে। এসময় আগত ড. রুথ ক্যালিসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান উপাচার্য।
সেমিনার বক্তা ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক এর পলিটিক্স এন্ড দ্যা সেন্টার ফর এপ্লাইড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের লেকচারার (হিউম্যান রাইটস) ড. রুথ ক্যালি মানবাধিকারের বিভিন্ন ইতিহাস উদাহরণসহ প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পালাবদল ঘটেছে, যা নিয়ে প্রখ্যাত আইনজ্ঞ অধ্যাপক গ্রেইনে ডি বুরকা (Gráinne de Búrca) আলোকপাত করেছেন। ঐতিহ্যগতভাবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আলোচনা ও গবেষণার মনোযোগ ছিল একটি 'উপর থেকে-নিচের' কাঠামোর দিকে। এর অর্থ হলো—আমরা প্রধানত আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আদালত এবং ক্ষমতাবান অভিজাতদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতাম। মূলত, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র বা মূল উৎস বলে মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে, মানবাধিকার গবেষণা একটি 'নিচ থেকে-উপরের' দৃষ্টিভঙ্গিতে সরে এসেছে।
এই নতুন অভিমুখের মূল ফোকাস হলো, মাঠে বাস্তবে কাজ করা মানুষ ও সংগঠনগুলো; যেমন: সুশীল সমাজের কর্মীরা, প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনগুলো। অর্থাৎ, মানবাধিকার এখন আর কেবল কয়েকটি আইনি তত্ত্ব বা ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি বাস্তব জীবন এবং তৃণমূল স্তরের সক্রিয় আন্দোলনের একটি প্রতিচ্ছবি।
ড. রুথ ক্যালি জানান, গবেষণার এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য গবেষকরা বর্তমানে একাধিক ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। এরমধ্যে রয়েছে নৃ-তত্ত্ব, চর্চা-ভিত্তিক গবেষণা এবং আলাপ-আলোচনা বা দর কষাকষির মাধ্যমে কীভাবে সামাজিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি মানবাধিকারের আন্দোলন ও গবেষণাকে আরও বেশি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জন-সম্পর্কিত করে তুলেছে। ভবিষ্যতে মানবাধিকারের অগ্রগতি মূলত এই তৃণমূল স্তরের কণ্ঠস্বরের উপর নির্ভর করবে। এছাড়া মানবাধিকারের নানা দিক তুলে ধরেন ড. রুথ ক্যালি। প্রেজেন্টেশন শেষে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ড. রুথ ক্যালি।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. শাহাদাত হোছাইন এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মো. সোহরাব জাহানের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক তাসলিমা আকতার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.