দেশচিন্তা ডেস্ক: কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহামের দুর্দান্ত গোলেই শেষ পর্যন্ত হাসলো রিয়াল মাদ্রিদ। সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে রোমাঞ্চে ভরপুর এক এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। এই জয়ে কাতালান ক্লাবটির বিপক্ষে টানা চার ম্যাচের হারের হতাশা ঝেড়ে ফেলেছে রিয়াল, আর লা লিগার শীর্ষে তাদের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিয়েছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে ম্যাচের শুরুতেই এমবাপের গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। যদিও পরে পেনাল্টি মিস করেন তিনি, তবুও প্রথমার্ধেই বেলিংহামের গোলই হয়ে ওঠে জয়সূচক। বার্সার একমাত্র গোলটি করেন ফারমিন লোপেজ। শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সেলোনার মিডফিল্ডার পেদ্রি, যার ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ম্যাচজুড়ে।
এই জয়ে ১০ ম্যাচে ৯ জয় নিয়ে ২৭ পয়েন্টে শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনার থেকে এখন তাদের ব্যবধান ৫ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে আতলেতিকোর কাছে হারের পর এই জয় প্রমাণ করলো-বড় ম্যাচ জিততেও প্রস্তুত জাবি আলোনসোর দল।
জার্মান কোচ হানসি ফ্লিক লাল কার্ডের কারণে নিষিদ্ধ থাকায় এই ম্যাচে বার্সেলোনার ডাগ আউটে ছিলেন তার সহকারী মার্কাস সর্গ। তবে বার্সা নেমেছিল বেশ দুর্বল দল নিয়ে। রাফিনিয়া, লেভানদোভস্কি, দানি অলমো- এরা কেউই ছিলেন না দলে। গ্রোয়িন ইনজুরি থেকে ফেরা লামিন ইয়ামালও শতভাগ ফিট নন, তবুও তাকে একাদশে রাখা হয়।
সপ্তাহখানেক আগেই ইয়ামালের মন্তব্য- রিয়াল নাকি “চুরি করে জেতে” ও “সবসময় অভিযোগ করে”, বের্নাবেউর দর্শকদের ক্ষেপিয়ে তোলে। তার নাম ঘোষণার সময় পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে শোনা যায় প্রবল উল্লাসধ্বনি ও বিদ্রূপ। বল দখলে বার্সেলোনা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরি করেছে রিয়ালই। শুরুতেই ভিনিসিয়ুসকে ফাউল করে রিয়ালকে পেনাল্টি উপহার দেন ইয়ামাল, তবে ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। রেফারির মতে, সংস্পর্শটা শুরু করেছিলেন ভিনিসিয়ুস নিজেই।
এরপরই আসে এমবাপের বুলেট শট। বাক্সের বাইরে থেকে নেওয়া চমৎকার শটেই জালের দেখা পান ফরাসি তারকা, কিন্তু সামান্য অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়। তবে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। জুড বেলিংহামের অসাধারণ পাস থেকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করেন এমবাপে। এই মৌসুমে লিগে তার ১১তম গোল।বেলিংহাম ও ফেদে ভালভার্দে কাছাকাছি সুযোগ মিস করেন, অন্যদিকে গোলরক্ষক শেজনি ঠেকিয়ে দেন ভিনিসিয়ুস ও বেলিংহামের আরও দুটি প্রচেষ্টা। এমন সময়ের মধ্যেই আসে বার্সেলোনার সমতা।
আরদা গুলার এক ভুল পাসে বল কাড়েন মার্কাস র্যাশফোর্ড (তার প্রথম এল ক্লাসিকো), যিনি পাস দেন লোপেজকে। ৩৮ মিনিটে লোপেজের জোরালো শটে সমতা ফেরায় বার্সা। তবে পাঁচ মিনিট পরই বেলিংহামের গোল ফের এগিয়ে দেয় রিয়ালকে। ভিনিসিয়ুসের ক্রস থেকে মিলিতাওয়ের হেডে বল বেলিংহামের সামনে পড়তেই তিনি সহজেই জালে ঠেলে দেন, বের্নাবেউতে এপ্রিলের পর এটি ছিল তার প্রথম গোল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রিয়ালের লিড বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এরিক গার্সিয়ার হাত ছুঁয়ে পেনাল্টি পেলে এমবাপের শট ঠেকিয়ে দেন শেজনি। ইয়ামাল এরপর দূরপাল্লার এক শটে গোলের চেষ্টা করলেও বল অনেক ওপরে উঠে যায়। এরপর থেকে রিয়াল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করে নেয়, বার্সাকে কোনোভাবেই বিপজ্জনক সুযোগ তৈরি করতে দেয়নি।
শেষ মুহূর্তে রদ্রিগো ও ব্রাহিম দিয়াজকে নামায় রিয়াল, বিপরীতে বার্সার আক্রমণে তেমন বিকল্প ছিল না। শেষ মুহূর্তে রোনাল্ড আরাউহোকে স্ট্রাইকার হিসেবে পাঠান, যেমনটা তিনি জিরোনার বিপক্ষে করেছিলেন। তবে এবার তেমন কিছু ঘটেনি- কর্তোয়া গোলরক্ষায় দৃঢ় প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান তিনি। শেষ বাঁশি বাজার আগমুহূর্তে পেদ্রির লাল কার্ডের পর বেঞ্চে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। খেলা শেষ হওয়ার পরও উত্তেজনা থামেনি- ভিনিসিয়ুস ও ইয়ামাল দুজনেই তর্কে জড়ান।
ম্যাচ শেষে রিয়ালের মিডফিল্ডার অরেলিয়েন চুয়ামেনি জানান, পরিকল্পনা মেনে খেলার ফলেই এই জয় এসেছে। “আমাদের এভাবেই চলতে হবে। এটা কেবল তিন পয়েন্ট, সামনে আরও ম্যাচ আছে। আমাদের উন্নতি করতে হবে।” ইয়ামালের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়েও কথা বলেন তিনি, “ওগুলো শুধু কথা, তাতে খারাপ কিছু নেই। বরং আমাদের একটু বাড়তি উদ্দীপনা দিয়েছে। যদি ইয়ামাল কথা বলতে চায়, সমস্যা নেই। খেলা মাঠে হয়- আর মাঠে আমরা জিতেছি। আমরা খুশি, এখন সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.