দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) উদ্যোগে এবং ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের আয়োজনে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ‘রাজনীতি, খেলাপি ঋণ ও আস্থা: বাংলাদেশের প্রচলিত ও ইসলামিক ব্যাংকের জন্য একটি রূপরেখা’ শীর্ষক এক সেমিনার চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মো. কামাল উদ্দিন এবং কি-নোট স্পিকার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিন্স এর প্রফেসর ড. এম. কবির হাসান। এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চবি গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং সভাপতিত্ব করেন আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আজকের সেমিনারের টপিকটা খুবই দারুণ। আইকিউএসি ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ এরকম সুন্দর সেমিনার আয়োজন করার জন্য। এ সেমিনার থেকে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং অনেক কিছু জানা যাবে। আইকিউএসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকগুলোর লেনদেনের ক্ষেত্রে আস্থার বিষয়ে চিন্তাটা মাথায় আগে আসে। সবাই ভাবে তার টাকাটা নিরাপদ থাকবে কিনা। আবার ইসলামিক নন ইসলামিক ব্যাংকের পলিসিগুলো আলাদা। এজন্য আজকের টপিকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী।
এ সেমিনারে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়। বিশেষ করে, রাজনীতি, খেলাপি ঋণ এবং জনগণের আস্থার মতো বিষয়গুলো কীভাবে প্রচলিত ও ইসলামিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে কি-নোট স্পিকার প্রফেসর ড. এম. কবির হাসান তার প্রেজেন্টেশনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাত পুরো দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। গত স্বৈরাচার আমলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ অনিয়ম, জঞ্জাল তৈরি হয়েছে সেটা চাইলেই অল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব না। এসময় তিনি চার্টের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশের আর্থিক খাতে ব্যাংকিং সেক্টরের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ সম্পদই প্রমাণ করে যে আমাদের অর্থনীতি কতটা ব্যাংক-নির্ভর। ব্যাংকিং খাত আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এটি জনগণের সঞ্চয় সংগ্রহ করে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্প পর্যন্ত সবকিছুর জন্য ঋণের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। দেশের শিল্পায়ন ও নগরায়নের পেছনে ব্যাংকিং খাতের এই ভূমিকা অপরিহার্য। তবে এই আধিপত্যের কিছু গভীর ঝুঁকিও রয়েছে। প্রথমত, আমাদের অর্থনীতিতে উচ্চ সংহতকরণ ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। এর মানে হলো, যদি কোনো কারণে ব্যাংকিং খাত ব্যর্থ হয়, তবে পুরো অর্থনীতিই একটি একক দুর্বলতার শিকার হবে। এটি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে একটি নির্দিষ্ট খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পুরো ব্যবস্থার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাতের বাইরে বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। আমাদের পুঁজি বাজার এখনও ততটা শক্তিশালী নয় যে এটি ব্যাংকিং খাতের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে, যখন ব্যাংকিং খাতে কোনো সংকট দেখা দেয়, তখন অর্থায়নের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তৃতীয়ত, এই অতিরিক্ত ব্যাংক-নির্ভরতা আমাদের অর্থনীতিকে বিভিন্ন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে কোনো ধাক্কা লাগলে পুরো অর্থনীতিই তার প্রভাবে সংকটের মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, এ অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ইসলামিক অর্থব্যবস্থা বিকাশের পথেও একটি বড় বাধা। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর অত্যধিক নির্ভরতার কারণে শরিয়াহ-সম্মত আর্থিক উপকরণ এবং ঝুঁকি-বণ্টন ব্যবস্থার মতো বিকল্পগুলো বিকশিত হতে পারছে না। আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করতে হলে এই ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।
এসময় আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন, শামসুন নাহার প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বেগম ইসমত আরা হক ও তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মো. শহীদুল হকসহ বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.