দেশচিন্তা ডেস্ক:
অধ্যাপক ডাক্তার চিত্তরঞ্জন শর্মা
মহানায়ক উত্তম কুমারের জন্ম হয়েছিল ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মাসে। আর আর ট্রেনে প্রয়াত হন ১৯৮০ দশকের ২৪ জুলাই। তাঁর জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মহানায়কের আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়।
যতদূর জানা যায় চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা তাঁর জন্য সহজসাধ্য ছিল না। প্রতিকূল অবস্থায় তিনি নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টার অনুকূলে এসেছিলেন। সংসারের হাল ধরতে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত না করেই কলকাতা পোর্টে চাকরি শুরু করেন উত্তম কুমার। চাকরি চলাকালীন অবস্থায় মঞ্চে অভিনয় করতেন। এরপর অনেক পরিশ্রম করে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পান। নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বহু খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে সত্যজিৎ, ঋত্বিক মৃণাল, ছবি বিশ্বাস, কানন দেবী, সুচিত্রা সেন ও সৌমিত্র। তবুও তাঁর মত স্মরণযোগ্য নয় কেউ। আমরা জানি উত্তম কুমার এমন একজন অভিনেতা। যার নাম কোন ছায়াছবিতে যুক্ত হওয়া মাত্রেই প্রযোজক পরিবেশক ঝাঁপিয়ে পড়তেন সেই ছবির পেছনে অর্থ লগ্নি করতে। তবে এই অবস্থার জন্য তাকে অনেক ধৈর্য্য ও পরিশ্রম করতে হয়েছে।
উত্তম কুমার অসংখ্য ছায়াছবির মধ্যে উল্লেখযোগের মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিদান, মায়াডোর, বসু পরিবার, সাড়ে চুয়াত্তর, হারানো সুর, পথে হল দেরি, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা, সাগরিকা, নায়ক, চিড়িয়াখানা ও যদুবংশ ইত্যাদি। উত্তম কুমার প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য একটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছিলেন। উহার নাম ছিল যৌন রোগ। যৌন রোগীর ভূমিকায় ছিলেন নায়িকা মঞ্জু দে। উত্তম কুমার ভালো গান জানতেন। গান শিখেছিলেন ধ্রুপদী কন্ঠ শিল্পী নিদানবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট। তিনি একটি গানের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। বিদ্যালয়টির নাম সাউথ চক্রবেড়িয়া গার্লস স্কুল। তিনি গৌরী দেবীকে গান শেখাতেন, অবশেষে তার সঙ্গে বিয়ে হয়। উত্তম কুমার হেমন্ত, মান্না দে ও সন্ধ্যার মত নামি শিল্পীদের আসরে গান পরিবেশন করতেন। কাল তুমি আলেয়া ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক শওকত ওসমানের সরাসরি ছাত্র ছিলেন উত্তম কুমার। উত্তম কুমার কলকাতার কমার্স কলেজে পড়তেন। শওকত ওসমান সেই কলেজের শিক্ষক বিদায় উত্তম কুমারের পাঠ গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল। বাংলা ছায়াছবির সব নায়ক নায়িকা পেশাদারী যাত্রা সমূহে অভিনয় করতেন, উত্তম কুমার তা করেননি। যাত্রা কে অসম্ভব ভালবাসার কারণে তিনি বছরে একবার নিজ উদ্যোগে নিজের পাড়ায় যাত্রা অভিনয় করতেন ১৯৫৩ সালে শ্যামলী নাটকে অনিলের চরিত্রে অভিনয় করেন। নায়িকা ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। উল্লেখ্য যে, নাটকটি ৪৮৪ এর রাত ধরে অভিনীত হয়, পরে তিনি চিত্ররূপে ও ছিলেন। নায়িকা ছিলেন কাবেরী বসু। বহু সংখ্যক ছবিতে উত্তম কুমার দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, প্রথমে করেন তাসের ঘর। ১৯৫৭ সালে তার অভিনীত ইহা প্রথম রঙিন ছবি পথে হল দেরি, হারানো সুর ছবিতে তিনি প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন। অসংখ্য বাংলা ছায়াছবির উত্তম কুমারের জুটি দেখতে পাই বাংলাদেশের জন্মগ্রহণকারী মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে। সুচিত্রা সেনের স্বামী কিন্তু সহজভাবে উহা গ্রহণ করতে পারেননি। প্রয়াণকালে উত্তম কুমার যে চিকিৎসালয়ের ৬নং কেবিনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, সুচিত্রা সেন ও ঐ ৬নং কেবিনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ভারত সরকার "ভরত" পুরস্কার সর্বপ্রথম চালু করেছিলেন। উত্তম কুমারই প্রথম এই "ভরত" পুরস্কার গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন। উত্তম কুমারকে মহানায়ক রূপে এখনো সকলেই স্মরণ করেন। মহানায়ক ও গায়ক উত্তমকুমার তাঁর বিদেহী আত্মার সদ্গতি কামনা করি।
লেখক- চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.