দেশচিন্তা ডেস্ক: রোহিঙ্গা সংকটের ৮ বছর পূর্তিতে কক্সবাজারে তিন দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে উখিয়ায় ইনানীতে অবস্থিত সেনাবাহিনী পরিচালিত হোটেল বে-ওয়াচের সম্মেলন কক্ষে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
‘কনফিডেন্স বিল্ডিং ফর রিপ্যাট্রিয়েশন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রত্যাবাসন নিয়ে নিজেদের ভাবনা, ক্যাম্পের আশ্রয় জীবন, রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভোটে নির্বাচিত কমিউনিটি প্রতিনিধি খিন মংয়ের পাশাপাশি দুই রোহিঙ্গা তরুণী লাকি করিম ও উম্মে সালমার সঞ্চালনায় আয়োজিত এই অধিবেশনে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, তরুণ-তরুণীসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের কণ্ঠে বারবার উঠে আসে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিনিধি মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ বলেন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে আমরা অনিশ্চিত জীবন নিয়ে বেঁচে আছি, মর্যাদার সাথে দ্রুত আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের আরকানে ফিরতে চাই। বিশ্বকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যেন আমরা ঘরে ফিরতে পারি।
বক্তব্যে তরুণ রোহিঙ্গা ফটোগ্রাফার সাহাত জিয়া হিরো, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে থাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, বিশ্বের সামনে আমাদের কথা তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের জনগণের অবদান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চিরকাল মনে রাখবে।
এছাড়াও রোহিঙ্গা প্রতিনিধির মধ্যে ফুরকান মির্জা, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, হুজ্জৌত উল্লাহ, আবদুল আমিন, আবদুল্লাহ, মুজিফ খান বক্তব্য রাখার পাশাপাশি প্রবাসী রোহিঙ্গারাও আলোচনায় অংশ নেন।
অধিবেশনে অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস এইচ. অ্যান্ড্রুজ, জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স, মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্তকারী মেকানিজমের প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান, এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরর-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার রউফ মাজু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা ছিলেন অধিবেশনে।
এছাড়া বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ শতাধিক রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
এই আয়োজনকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রথমবার আয়োজিত বড় সম্মেলন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে কীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ উন্মুক্ত করা যায়। পাশাপাশি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্য নিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। '
সোমবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের ৮ বছর পূর্তির দিন সকালে এই সম্মেলনের একটি অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে সংক্ষিপ্ত সফরে কক্সবাজার আসবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ১০৭ দেশের অংশগ্রহণে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের উদ্যোগে চলমান আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
সংস্থাটির যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি ধরে রাখার এবং সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানের জন্য যে কোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। সংকটের সমাধান মিয়ানমারে নিহিত এবং রোহিঙ্গারা যখন পরিস্থিতি অনুকূল হবে, তখন স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে তারা বাড়িতে ফিরতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ইউএনএইচসিআর সরকার এবং মাঠ পর্যায়ের মানবিক অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায় এবং প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করা যায়।
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনটির দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা শেষ দিন ২৬ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ ইমরান সোহেল। মোবাইল : ০১৮১৫-৫৬৩৭৯৪ । কার্যালয়: ৪০ কদম মোবারক মার্কেট, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম। ইমেল: [email protected]
Copyright © 2025 Desh Chinta. All rights reserved.