
রাজা সূর্য খাঁ
পৃথিবীর নাম যদি হয় “নীলগ্রহ”,
তবে ফিলিস্তিন, এক রক্তমাখা মরুভূমি!
যেখানে শিশুরা জন্ম নেয় বুকে কফিন বেঁধে,
আর মাতৃগর্ভও ভয়ে ভয়ে বাড়ে-
কারণ, আকাশের নিচে কেউ নিরাপদ নয়।
সেখানে রুটি পোড়ে আগুনে নয়, আঘাতে।
সেখানে বৃষ্টির চেয়ে বেশি ঝরে বোমা।
শিশুর মুখে থাকার কথা ছিলো দুধের ফেনা,
সেখানে শুকিয়ে গিয়েছে স্বপ্ন,
ভেসে গেছে ধ্বংসস্তূপের ধুলোর মাঝে।
তুমি জানো?
ওখানে রাত মানেই ঘুম নয়—
রাত মানে, কে কে থাকবে সকাল অবধি এই দগ্ধ ভূমিতে!
জোনাকির আলো নয়, ড্রোনের চোখ জ্বলে ওদের জানালায়,
চাঁদটাও যেন ওখানে অন্ধকারের দালাল!
মায়ের কোল আজ জ্বলন্ত চুল্লি,
সন্তানকে আগলে রাখে নিজের বুকের ছাই দিয়ে!
তার হাতে নেই রুপোর চুড়ি,
আছে শুধু সন্তানের ছিন্ন পোড়া মাংসের গন্ধ!
শিশু যদি খেলে, তা মাটির নিচে—
ভাঙা খেলনা নয়, নিজের ভাইয়ের হাড় নিয়ে।
আর যখন ছবি আঁকে,
তাতে সূর্য থাকে না,
থাকে ধোঁয়া, পুড়ে যাওয়া স্কুল,
আর বাবার মুখটুকু,
শেষবারের মতো দেখা।
এ পৃথিবীর একপ্রান্তে শীত মানেই গরম কম্বল,
ওখানে শীত মানেই-
একটা ধ্বংসস্তুপে লুকানো দেহ ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া।
তুমি জানো কেমন লাগে?
যখন শিশুরা কাঁদে না! কারণ ওরা কাঁদতে ভুলে গেছে?
বিশ্ব তাকিয়ে দেখে,
ধাতব বিবেক আর সফেদ কূটনীতি হাতে,
নির্মমভাবে অসহায়ের শরীর গোনে,
কিন্তু কেউ এগোয় না।
কেউ বলে না, থেমে যাও, মানবতা কাঁদছে।
সেই কাঁদা নদীর নামই ফিলিস্তিন,
যেখানে চোখের জল বয়ে চলে ইতিহাস,
আর প্রতিটি কবর গোপনে ফিসফিস করে বলে,
‘তোমাদের চুপ থাকা আমাদের দ্বিতীয় মৃত্যু!’
আমি আকাশের দিকে চেয়ে থাকি,
যদি কোনও নক্ষত্র বেছে নেয় ওদের দুঃখের গল্প শুনতে।
কিন্তু তারা হারিয়েছে ভাষা,
আর বিশ্ব?
বিশ্ব এক নির্বাক দর্শক,
যার অন্তরে রক্তের বদলে বরফ জমে গেছে!