
দেশচিন্তা ডেস্ক:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গৌরীপুর বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্রকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহতরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৌরীপুর পৌরসভার মধ্যবাজার শহরে পান মহাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শুভ্র পৌরসভার কালিপুর এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
এ ঘটনায় আজ রোববার ভোরে গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান (ইউপি) রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া রিয়াদের সহযোগী জাহাঙ্গীর, মুজিবর ও রাসেল নামে আরও তিন যুবককে গৌরীপুর উপজেলার কাউরাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকী।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন শহরের পান মহালের আবদুর রহিমের চায়ের দোকানে চার থেকে পাঁচজন সহযোগীকে নিয়ে চা পান করছিলেন মাসুদুর রহমান শুভ্র। এ সময় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী নেমে হঠাৎ শুভ্রর ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুভ্র তখন দৌঁড়ে পাশের মসল্লা মহালে একটি ওষুধের দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানে হামলাকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে চলে যান। এ সময় শুভ্রর দুই সহযোগী জাহাঙ্গীর ও আল-আমীনকেও রক্তাক্ত জখম করা হয়। আহত শুভ্রকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে শুভ্রর মৃত্যুর খবরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে শুরু করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে রাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও রোববার ভোর থেকেই এলাকার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্দ লোকজন শহরের বিভিন্ন সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে টায়ার জ্বালিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তেজিত লোকজন প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের শহরের উত্তর বাজারের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘গত বছর জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে শুভ্রর সাথে চেয়ারম্যান রিয়াদের হাতাহাতি হয়। তখন এ ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে বেশি দূর এগোয়নি। এরপর থেকেই রিয়াদ ও শুভ্রর বিরোধের সৃষ্টি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন লাঞ্ছিত হওয়ার জেদ মেটাতেই রিয়াদ তার দলবল নিয়ে শুভ্রর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান কবির বলেন, ‘আটকের পর এ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অধিকতর তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ জানা যাবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের টহল অব্যাহত রয়েছে।’