
দেশচিন্তা ডেস্ক: চট্টগ্রামের নন্দনকাননের অভিজাত মিষ্টির দোকান বোস ব্রাদার্সে তেলাপোকা, চিকা, ইঁদুর ও টিকটিকির উপস্থিতি মিলেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিবার ও অতিথি আপ্যায়নের জন্য বিশ্বস্ততার সঙ্গে এ দোকানের মিষ্টি কেনা গ্রাহকরা হঠাৎ এই ভয়াবহ চিত্র দেখে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক অভিযানে নানা অনিয়মের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রায় একই ধরনের অনিয়মের দায়ে নগরের এনায়েতবাজার এলাকার রয়েল বাংলা সুইটস হাউস নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা আক্তার কণার নেতৃত্বে নন্দনকাননের বোস ব্রাদার্সে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দেখা যায়, উৎপাদন এলাকাজুড়ে ইঁদুর, তেলাপোকা, চিকা ও টিকটিকির বিচরণ; অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অসুস্থ কর্মীদের দিয়ে অনিবন্ধিত উপায়ে খাদ্য উৎপাদন; রান্নাঘরে আবর্জনা জমিয়ে রাখা এবং লেবেলিং প্রবিধানমালা লঙ্ঘনসহ একাধিক গুরুতর অসঙ্গতি।
এসব অপরাধের দায়ে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩–এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়।
এদিকে, অভিজাত মিষ্টির দোকানে এমন অনিয়মের খবরে ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত ক্রেতা মুজিবুল হক। তিনি বলেন, পরিবারে যেকোনো অনুষ্ঠানেই বোস ব্রাদার্সের মিষ্টি নিতাম। ব্র্যান্ডটার ওপর অন্ধ বিশ্বাস ছিল। কিন্তু আজ যে খবর শুনলাম রান্নাঘরে ইঁদুর–তেলাপোকা, অসুস্থ কর্মী— এগুলো খুবই হতাশাজনক। এত পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানে এমন বেহাল অবস্থা, সত্যিই আর বিশ্বাস করতে পারছি না।
জানা যায়, ১৯২০ সালে শুধাংশু বিমল বোসের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় বোস ব্রাদার্স। এটি শুধুমাত্র মিষ্টির জন্য নয়, বরং ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার স্থান হিসেবেও পরিচিত ছিল। মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ অনেক বিপ্লবী এই দোকানে মিষ্টি খেতে খেতে আন্দোলনের পরিকল্পনা করতেন। দোকানের প্রতিষ্ঠাতা শুধাংশু নিজেই একজন দক্ষ মিষ্টি কারিগর ও সশস্ত্র বিপ্লবী ছিলেন। বছরের পর বছর ধরে দোকানটি পরিবারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বোস ব্রাদার্সে প্রায় ১৫ ধরনের মিষ্টি বিক্রি হয়, যার মধ্যে রসমালাই, রসগোল্লা, দধি, কালোজাম, বাদশাভোগ, সন্দেশ, চমচম ইত্যাদি জনপ্রিয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হকের নেতৃত্বে এনায়েত বাজারের রয়েল বাংলা সুইটস হাউসে আরেকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। সেখানে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনিবন্ধিত উপায়ে নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ এবং নিয়মবহির্ভূত ও অসম্পূর্ণ লেবেলিংসহ বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। এসব অপরাধের দায়ে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩–এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।










