
দেশচিন্তা ডেস্ক: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে সে সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সনদ স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জুলাই সনদ নিয়ে আমরা একটি সাংবিধানিক আদেশের কথা বলেছি। যে আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে উনি জারি করবেন। এটি জারি করার অধিকার প্রেসিডেন্টের নেই।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বেরিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা আজকে দেখেছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং অভিযোগের কারণে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে আদালতে আনা হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি, সরকার এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রতি আমরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি যে, ন্যায়বিচারের একটি ধাপ আমরা আগাচ্ছি।
কিন্তু এর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনালের পাশাপাশি সারা দেশে যে মামলা হয়েছে, জুলাই শহীদ পরিবারদের পক্ষ থেকে আহতদের পক্ষ থেকে, সেই মামলাগুলোর বিষয়ে সরকারের কী পদক্ষেপ?
আমরা দেখতে পাচ্ছি, পত্রিকায় আসছে, আসামিরা জামিনে ছাড়া পাচ্ছেন এবং তারা শহীদ পরিবার এবং আহতদের হুমকি দিচ্ছেন। সেই জায়গায় শহীদ পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা এবং বিচারের একটা রোডম্যাপ আমরা চেয়েছি। নির্বাচনের আগে যাতে বিচারের একটা রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়। প্রায় ৮ শতাধিক মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর এখন অবস্থা কী এবং সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে? কতদিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় সেটা সম্পন্ন হবে?
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে আজকের বৈঠকে আলোচনা সম্পর্কে নাহিদ বলেন, যেহেতু জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি সেখানে অংশগ্রহণ করেনি, ফলে আমরা আমাদের অবস্থান সরকারের কাছে তুলে ধরেছি।
আমরা সে কথাগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছি যে, জুলাই সনদের শুধু কাগুজে মূল্যে আমরা বিশ্বাসী নই। ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নটা কীভাবে হবে সেই সম্পর্কে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর আমরা সনদ স্বাক্ষর করব। সেক্ষেত্রে আমরা একটি সাংবিধানিক আদেশের কথা বলছি। যে আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে জারি করবেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের যে সার্বভৌম ক্ষমতা সেটার একমাত্র বৈধতা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের আছে সেটা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুর নাই। পরে সাংবিধানিক আদেশ, যেটা সংবিধান বহির্ভূত হিসেবে দেওয়া লাগবে সেটা কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট চুপ্পু দিতে পারবে না। সেটা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিতে হবে। সেটার আইনি এবং রাজনৈতিক কারণ আমরা উনার সামনে উনার কাছে তুলে ধরেছি।
দ্বিতীয়ত: নোট অফ ডিসেন্টের বিষয়টা আমরা বলেছি। নোট অফ ডিসেন্ট কোন কার্যকারিতা থাকবে না। সবাই এই বিষয়গুলোতে ঐক্যমত হয়েছে। জুলাই সনদ যেই বিষয়গুলো উপর রচিত হয়েছে সেটাই পুরোটা গণভোটে যাবে এবং গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হলে পরবর্তী সংসদ সংসদের একটা গাঠনিক ক্ষমতা থাকবে যার ফলে তারা একটি সংস্কারকৃত একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে। এই পুরা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি সরকার ঐক্যমত কমিশন সুপারিশ দিবে সরকার সেই অনুযায়ী কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটার উপর নির্ভর করে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করবো।
নাহিদ বলেন, সরকারের কাছে আমরা আমাদের এউ দাবিগুলো জানিয়েছি এবং এই দাবিগুলো যাতে বিবেচনা করা হয় এবং সরকার যাতে সেই পথে যৌক্তিকভাবে এই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আগায় সে বিষয়ে আমরা জোর দাবি জানিয়েছি।
নাহিদ বলেন, আজকের বৈঠকে আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আচরণ আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে এটা নিরপেক্ষ হচ্ছে না। এটা স্বচ্ছ হচ্ছে না এবং নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে কার্যক্রম করার কথা ছিল সেটা করছে না। কিছু কিছু দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে এবং কোন কিছু কোন দলের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ তারা করছে। এই পুরো বিষয়টা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা বলেছি। বিগত সময়গুলোতে নির্বাচন কমিশন যেই যেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেখানে কীভাবে তাদের পক্ষপাতিত্ব ফুটে উঠেছে সেই বিষয়ে আমরা বলেছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে না পারে এর দায় সরকারের উপরও আসবে। ফলে আমরা সরকারকে সেই বিষয়টি অবহিত করেছি এবং আমরা মনে করি যে নির্বাচন কমিশন এই মুহূর্তে পুনর্গঠন হওয়া প্রয়োজন।
বৈঠকে আমরা জনপ্রশাসন এবং উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছি। জনপ্রশাসনে যেভাবে বদলি পদায়ন গুলো হচ্ছে সেটা আসলে কীসের ভিত্তিতে হচ্ছে? সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন হচ্ছে কিনা? কারণ আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি যে, প্রশাসনের বিভিন্ন ভাগবাঁটোয়ারা হচ্ছে, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যারা পরিচিত তাদের মধ্যে। তারা নিজেদের মধ্যে প্রশাসন এসপি, ডিসি এগুলো ভাগবাটোঁয়ারা করছে এবং নির্বাচনের জন্য তারা সেই তালিকা করছে সরকারকে সেগুলো দিচ্ছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও সেই দলগুলোর সঙ্গে সে ব্যাপারে সহায়তা করছে ফলে এভাবে চললে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
নাহিদ বলেন, সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে ফাংশন করে এবং উপদেষ্টা পরিষদে যাদের বিরুদ্ধে এই সংশ্লিষ্টতাগুলো রয়েছে অদক্ষতা দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক দলীয় পক্ষপাতে তাদের বিষয়ে যাতে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেন। আর আমরা বিসিএস নন ক্যাডার যে বিধিমালা সেটি নিয়েও আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।
এরআগে বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৌঁছেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় চার নেতা।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।